ইবি‌ প্রক্টর ওপর হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

ইবি‌ প্রক্টর ওপর হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

ইবি প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে সিট নিয়ে বিরোধের জেরে শনিবার মধ্যরাতে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানসহ অন্তত পাঁচজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান এবং আল হাদিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত হামলা করা হয়েছে৷ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।

শিক্ষার্থীরা বলেছেন, “গতকাল মোস্তাফিজ স্যার বিষয়টি মীমাংসা করতে গিয়েছিলেন। তবে সুশৃঙ্খল পরিবেশকে উশৃঙ্খল করে যারা আমাদের শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছে, তাদের আমরা কোনভাবেই ক্ষমা করতে চাই না। আমরা কোন বিভাগের বিরুদ্ধে নই। যদি আইন বিভাগ অপরাধ করে, তাহলে আইন বিভাগ শাস্তি পাবে; আল ফিকহ যদি অপরাধ করে, তাদেরও শাস্তি হবে। তৃতীয় কোনো পক্ষ যদি অপরাধ করে, তাদেরও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হোক। তবে আমরা নিরপরাধ কারো বিরুদ্ধে নই। একজন শিক্ষককে অপমান করা মানে পুরো শিক্ষক জাতিকে অপমান করা।”

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এরআগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কুষ্টিয়া শহর থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ডাবল ডেকার বাসে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমন ও আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবের মধ্যে বাসের সিট ধরাকে কেন্দ্র হাতাহাতি হয়। পরে রাত সাড়ে ৮টায় বাসটি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাসটি ঘিরে ফেলেন।

ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম, আল হাদিস অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডলসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনার একপর্যায়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দুই বিভাগের কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে ইমার্জেন্সি সভা ডাকেন। প্রক্টর অফিসে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের মধ্যে সমঝোতা হলেও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তখন বিচার মেনে না নিয়ে প্রতিবাদ জানালে অনুষদ ভবনের সামনে অপেক্ষারত শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মধ্যরাত ১২টার দিকে অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসার সময় এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যকার ধাওয়া পালটা ধাওয়া পর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান তোপের মুখে পড়েন। শিক্ষার্থীদের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে আহত হন। অন্যদিকে আল হাদিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের পায়ে আঘাত লাগে। এছাড়া আইন বিভাগ ও আল ফিকাহ বিভাগেে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিল-ঘুষি চলাকালে কয়েকজন আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও সিকিউরিটি সেলের কর্মকর্তাদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুবাশ্বির আমিন বলেন, “গতকালের বিষয়টি মিমাংসা হ‌ওয়ার পর তাদের আক্রমণ বুঝিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে এই ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে। আমরা এই হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই। যারা এই হামলার সাথে জড়িত, তাদের বহিষ্কার‌করা না পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”

শাহ ফরিদ বলেন, “আমরা দেখেছি, গতকালের ঘটনায় আমাদের শিক্ষকমন্ডলী মীমাংসা করেছিল। কিন্ত মীমাংসা শেষে বাইরে এলে যাদের ইন্ধনে আমাদের ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা হয়েছে, আমরা তার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমরা প্রত্যাশা করছি চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, “বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছিল, তবে এরপরও এমন ঘটনা দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন। এক শিক্ষার্থী গুরুতর ও কয়েকজন আহত হয়, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, “বাসের ঘটনার সমাধান আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে করেছি। তবে পরবর্তী মারামারির ঘটনাটি নিয়ে আজ (রবিবার) বৈঠক করে পরে সিদ্ধান্ত নিব।”